আর্ত মানবের কল্যাণ সাধনের জন্যই আচার্য স্বামী প্রণবানন্দের আবির্ভাব । আর এই উদ্দেশ্যেই তার সাধনা ও সিদ্ধি। দেহ ও মনের শক্তিতে তিনি বাল্যকাল থেকেই ছিলেন অদম্য ও দৃঢ়চেতা। মাত্র পনেরো ষোল বছর বয়েসে থেকেই রাতের পর রাত অতিবাহিত করেছেন নিদ্রাহীন অবস্থায় যোগ সাধনায় । ব্রন্মচারী বিনোদ নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার বাজিতপুর গ্রামের ভুঁইয়া পরিবারে ব্রন্মচারী বিনোদের জন্ম । সময়টা ১৮৯৬ খ্রিঃ ২৯শে জানুয়ারী। পিতা বিষুণ্চরণ ভুঁইয়া ও মাতা সারদা দেবীর তিনি ছিলেন তৃতীয় পুত্রসস্তান।
পরিবারের কুলদেবতা নীলরুদ্র। বিষুও্চরণ ও সারদা বিগ্রহের নিত্য সেবাপূজায় ছিলেন সমর্পিত প্রাণ। যথাকালে মাঘী পূর্ণিমার গোধুলিলগ্নে পরিবারের ভূমিষ্ট হন বিনোদ। দিনটি ছিল বুধবার। অন্নপ্রাশনের সময় নতুন নামকরণ হয় বিনোদ।
ছোট থেকে গাম্ভীর্য ও চিস্তাশীলতা সর্বদা তার মুখভাবে ফুটে থাকত। প্রথমে বাড়ির কাছেই একটা ঘরে বসে ধ্যানের শুরু। এরপরে শ্মশান আর বাড়ির কাছে অরণ্য হয়েছে তাঁর ধ্যানের আসন। বিনোদের এই নিভৃত গোপন সাধনা চলতো লোকচক্ষুর অগোচরে । জানতেন কেবল একজন, তিনি হলেন তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক বীরেন্দ্রলাল ভট্টাচার্য এবং তিনি প্রাণের চাইতেও ভালবাসেন বিনোদকে। ১৯১৩ খ্রিঃ পুজোর ছুটিতে তিনিই বিনোদকে নিয়ে উপস্থিত হন উত্তর প্রদেশের গোরক্ষপুরে। সেদিন ছিল একাদশী তিথি। মহাযোগী গম্ভীরনাথজীর দিব্যদৃষ্টিতে ধরা পড়লেন ভাবীকালের আর এক মহাযোগী। এরপর বিনোদ মহাযোগী গম্ভীরনাথজীর কাছে দীক্ষা লাভ করলেন। গম্ভীরনাথজীর কাছে দীক্ষা লাভ করে তিনি গভীর তপস্যায় ব্রতী হলেন।
সাধনায় সিদ্ধযোগী বিনোদের কণ্ঠে এবার ঘোষিত হল মহাবাণী “এ যুগ মহাজাগরণের যুগ। এ যুগ মহামিলনের যুগ, মহা সমন্বয়ের যুগ। এ যুগ মহামুক্তির যুগ”।
তারপর বিনোদ ১৯৪২ খ্রিঃ প্রয়াগ কুম্ভে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন গোবিন্দানন্দ গিরির কাছে। তার নতুন নামকরণ হল স্বামী প্রণবানন্দ। এই বছরেই মাঘী পূর্ণিমার পুণ্য তিথিতে তিনি তার প্রথম সারির সাতজন শিষ্যকে নিয়ে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করলেন। ভারতের তীর্থসংস্কার এবং সেই সঙ্গে তীর্থযাত্রীর নিরাপত্ত৷ বিধানে স্বামী প্রণবানন্দের রয়েছে একইতিহাসিক অবদান। একবার গোরক্ষপুর যাওয়ার পথে তিনি পিতৃতীর্থ গয়ায় নেমেছিলেন স্বর্গত পিতার শ্রাদ্ধ ও পিগুদানের উদ্দেশ্যে গয়াধামে এক ভয়ঙ্কর অবস্থার সম্মুখীন হতে হল তাকে। তিনি রুদ্রমূর্তি ধরেছিলেন পান্ডা দেড় অত্যাচার কে প্রতিবাদ করতে আজ হিন্দুদের অবলম্বন ভারত সেবাশ্রম সংঘ গয়া এবং অন্যান্য তীর্থ স্থানে।
মহাযোগী প্রণবানন্দ মাত্র ৪৪ বছর বয়সে ১৯৪১ খ্রিঃ ৮ই জানুয়ারি কলকাতায় মহাসমাধিতে লীন হয়ে যান। ধর্মের ভিত্তিতে জাতি গঠন, বিভিন্ন শ্রেণীর হিন্দু জনসাধারণের মধ্যে এঁকা সখ্য মিলন ও সহযোগিতা স্থাপন চলো তাঁর মূল আদর্শ। মানুষ কে হিন্দু ধর্ম, রাজনীতি, শিক্ষা, সাধনা ও আচরণ সম্পর্কে সজাগ সচেতন রাখা ছিল তাঁর মূল মন্ত্র।